সংসদ সদস্য ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েও থাকেন না এমন এক মন্ত্রীসহ ৩০ জন সংসদ সদস্যকে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে নোটিশ দিয়েছে জাতীয় সংসদের সংসদ কমিটি। নোটিশের জবাবে চারজন সদস্য ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বেশিরভাগই ফ্ল্যাটে না থাকার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এছাড়া কয়েকজন এমপি নোটিশের জবাব এখনও দেননি।
জানা গেছে, বেশিরভাগ সংসদ সদস্যদের নোটিশের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সংসদ কমিটি। তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য স্পিকারের মাধ্যমে তাদের ডাকার চিন্তাভাবনা করছে। দরকার হলে তারা ওইসব ফ্ল্যাট সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাম ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যরা না থাকলে বরাদ্দ বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে সংসদ কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল বরাদ্দ নিয়েও ফ্ল্যাটে থাকেন না এমন সদস্যদের ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
সংসদ সদস্যদের আবাসন, ন্যামফ্লাটের নিরাপত্তা, অফিস বরাদ্দসহ বিভিন্ন বিষয় তদারকি করে সংসদ কমিটি। কমিটির সভাপতি হুইপ আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও নাখালপাড়ার সংসদ সদস্য ভবনে বরাদ্দ ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন না এমন আইনপ্রণেতাদের বাসা ছেড়ে দিতে গত বছরের ২৬ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ এপ্রিল আবারও চিঠি দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি চিফ হুইপ আসম ফিরোজ বলেন, ‘ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েও থাকেন না এমন ৩০ জনকে আমরা চিঠি দিয়েছি। এরমধ্যে চারজন ফ্ল্যাট ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ জবাবে লিখেছেন, তারা থাকেন। কেউ লিখেছেন, পরিবার থাকে। কেউ কেউ বলেছেন, মাঝে মাঝে এসে থাকেন। তবে, অনেকে সত্য কথা গোপন করেছেন। তিনি নিজেও জানেন অন্যায় করছেন, তারপরও স্টাফদের জন্য এটা করছেন বলে আমার ধারণা।’
তিনি আরও বলেন, সবার জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনে স্পিকার মহোদয়ের নেতৃত্বে তাদের ডাকা হবে। দরকার পড়লে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কমিটির সরেজমিনেও ওইসব ফ্ল্যাট পরিদর্শনে যাবে।
নিজে থাকেন না এমন একজন মন্ত্রীর নাম জানতে চাইলে চিফ হুইপ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের নাম বলেন।
বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে অনেক সংসদ সদস্য নিজে না থেকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, ড্রাইভার রাখার বিষয়টি গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার উঠে আসে।
আসম ফিরোজ আরও বলেন, ‘ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। এটা তো মানা সবার জন্য ম্যান্ডেটরি। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন ‘যারা থাকেন না’। এরপর তো তাদের নিজেদেরই বোঝা উচিত থাকি কী থাকি না। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর চিঠি দেওয়ার দরকার ছিলে না। তারপরও আমরা চিঠি দিয়েছি।’
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বৈঠকে মানিক মিয়া সংসদ সদস্য ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপরিচিত ও বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য জনবল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।’
এছাড়া কমিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সদস্য ভবন এলাকায় রাতে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা, পারিবারিক অতিথি ছাড়া অন্য দর্শনার্থীর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ এবং সদস্য ভবনগুলোর ছাদসহ অন্য কোন জায়গায় অবৈধ অবস্থানকারীদের তল্লাশি ও অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুপারিশ করে।
কমিটি সংসদ-সদস্য ভবনের অভ্যন্তরে স্টিকারবিহীন কোনও গাড়ি প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং আন্ডার ভেহিক্যাল সার্চ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করে।
বৈঠকে কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, আব্দুস শহীদ, নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, পঞ্চানন বিশ্বাস, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মো. আসলামুল হক এবং তালুকদার মো. ইউনুস বৈঠকে অংশ নেন।